অ্যান্টি-মানব

-নিলয় ঘোষ (১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮)

কলেজ টা বাইরে থেকে দেখতে ছোটো লাগলেও ভেতরে ঢুকলে সে ভুল ধারনা ভাঙবে। অসংখ্য অলিগলি রাস্তা আর তার সাথে সাথে ডিপার্ট্মেন্ট। সম্ভবত ক্যাম্পাস নেই বলেই হইতো এরকম টা লাগে।শহরের মধ্যভাগে অবস্থিত হলেও এই অংশে এখনো আনেক প্রাচীনতার ছাপ। ১২ টা ১৫ এর বেল পড়ল, মানে দুটো ক্লাস শেষ। বছর ২০ এর একটা ছেলে হেলতে দুলতে আসছে সামনের রাস্তা দিয়ে। কলেজের গেটের সামনের দোকানে এসে দাড়ালো ইশান।সেখান থেকে একটা জ্যাম পাউরুটি কিনে একটা বড়ো কামড় বসিয়ে ভাবল, ‘ধুর! দুটো ক্ল্যাস মিস করেছি তাই কি?এই ক্লাস টা কোনোরকমে করলেই হলো’।এসব ভাবতে ভাবতে জাম পাউরুটি খেতে লাগলো। এদিকে ১২ টা ৩০ বেজে গিয়েছে এতে তার বিন্দু মাত্র ভ্রূক্ষ্যেপ নেই।খাওয়া শেষ করে কলেজ এ ঢুকলো, দোতালায় তার ক্লাস। পদার্থবিদ্যার ক্লাস চলছে, দরজা টা হালকা দেওয়া। ইশান দরজাটা হালকা ফাকা করে বলল “স্যার আসব?”। উত্তর এল ‘না’।ইশান কোনো কথা না বলে ক্লাসরুম টা একবার ভাল করে দেখল, সবাই মুচকি মুচকি হাসছে। স্যার আবার বলল “ ১২ টা ১৫ এর ক্লাস এখন ১২ টা ৩৫, কলেজ টা আড্ডা মারার কোনো জাইগা নয়। আর হ্যা এর আগের ক্লাস টা তো করিসনি”। ইশান তখন মাথাটা হালকা নিচু করে বলল,”স্যার ট্রেনে গরু কাটা পড়েছিল, তাই আসতে লেট হল, যদিও এই পুরটাই তার অভিনয়, ভেতর ভেতর সে মজা পাচ্ছে।আর ট্রেনে গরু কাটা হল তার দৈনন্দিন মিথ্যা কথা গুলোর মধ্যে একটি। যায় হোক স্যার হয়ত তার মুল্যবান সময় নষ্ট করতে চাইনা, ইশান কে ভেতরে আসতে বলল। স্যার ইশানের মিথ্যা বুঝতে পারলো কি না তাতে অবশ্য তার কিছু যায় আসেনা। মনে মনে যুদ্ধ জয়ের হাসি নিয়ে সে ভাবতে লাগলো তার অ্যাটেন্ডেন্স টা এবার ১০০ এর ভিতর ২২ থেকে ২৩ হবে।শেষের দিক থেকে তিন নং বেঞ্চে বসে পড়ল। খুব মনো্যগ দিয়ে লেকচার শুনছে এরকম ভান করতে লাগলো। স্যার এবার বোর্ডের দিকে তাকিয়ে ইশান কে বলল,’বল এটার উত্তর কতো হচ্ছে?”।“কেস খেয়েছে রে ! এটা আগের দিন করিয়েছিল, আমার তো পড়া হয়নি” এসব ভাবতে ভাবতে বোর্ডের দিকে তাকিয়ে রয়েছে ইশান। “ছি ছি ফার্স্ট ইয়ারে শেখানো হয় এগুলো, থার্ড ইয়ারের ছাত্র হয়ে পারছিস না? অনার্স ছেরে দে যা।“ বলল স্যার। এবার হয়তো ইশানের একটু হলেও খারাপ লেগেছে।ক্লাস চলতে লাগল। কলেজ শেষে তার বন্ধু দের সাথে চা খেতে খেতে আড্ডাও দিল অনেক খন সে। একটু পর সন্ধ্যা হবে, এবার ইশান কে রুমে যেতে হবে। পাশেই স্টেশন, আকাশ মেঘলা, বৃষ্টি হবে হইতো। ইশান স্টেশনে পৌছে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিল। ১০ মিনিট পরে ট্রেন।সে ভাবল সত্যি ই তো এত সিম্পল একটা গামা ফাংশনের প্রব্লেম সে করতে পারেনি, তার ফিজিক্‌স ছেরে দেওয়ায় উচিত। এর মধ্যে হঠাত একটা তীব্র উজ্জ্বল আলো তার চোখের সামনে কয়েক সেকেন্ড এর জন্য ভেষে তাকে প্রায় অন্ধ করে দিল। কান গুলো তালা লেগে গিয়েছে চি চি শব্দে। ঝাপসা দেখছে ইশান।ছোটোবেলায় স্কুলে হঠাত ছুটির ঘন্টা পড়ে গেলে যেরকম হো হো আওয়াজ হত, সেরকম ভাবে সবাই চিৎকার করছে ,সবাই আতংকিত, এদিক ওদিক ছুটছে। ব্যাপার টা কি ঘটল সেটা দেখার জন্য ইশান ও চেষ্টা করল। এর মধ্যে একদল কৌতূহলী লোক বাজ পড়েছে বাজ পড়েছে বলে চিতকার করতে করতে ট্রেন লাইন বরাবর ছুটতে লাগল।সেই দৃশ্য দেখে ইশান আর আরও কয়েকজন তাদের পেছন পেছন গেল। ওখানে সবাই বলছে সিগন্যাল পোস্টের উপর বাজ পড়েছে। ইশান লক্ষ্য করল সিগন্যাল পোস্টের উপরের কিছু অংশ নেই, যেন ক্যাডবেরি থেকে কে এক কামড় খেয়ে নিয়েছে। সেই অদৃশ্য অংশটা খোজাখুজির পরেও পাওয়া গেল না। “বাজ পড়লে এরকম অদৃশ্য হয়ে যাই নাকি?” তার মনে প্রশ্ন জাগল। সে অবশ্য কোনো দিন ও বাজ পড়া দেখে নি। যাই হোক তাকে রুম এ ফিরতে হবে দেরি হয়ে যাচ্ছে। স্টেশন এ পৌছে দেখল তার ট্রেন এখনো ছারেনি।বাজ পড়ার জন্য হয়তো ডিলে করছে। সন্ধ্যে ৭ টাই সে রুমে পৌছালো। রুম বলা হচ্ছে এই কারনে যে এটা তার বাড়ি নয়, এখানে সে পড়াশোনার জন্য ভাড়া দিয়ে থাকে।খুব খিদে পেয়েছিল তার। ইশান হন্তদন্ত করে রুমে ঢুকে ব্যাগ টা খাটে টান মারল, এবার সোজা রান্না ঘরে, সকালে রান্নার মাসি এসে রান্না করে যায়, কিন্তু মাসি কখন আসে কখন যায়, এসবের কিছুই সে জানেনা, প্রথম প্রথম মাসি ঘুমন্ত ইশান কে ডেকে জিজ্ঞাসা করত কি রান্না হবে, কিন্তু এখন আর করেনা নিজের ইচ্ছা মতো রেধে চলে যায়।ইশান রান্না ঘর থেকে ভাত নিয়ে টেবিলে রেখে কোনোমতে হাত মুখ ধুয়ে এসে খেয়ে নিল। প্রতিদিনের মতো ল্যাপটপ টা নিয়ে খাটের উপর বসল, ইঊটিঊব দেখার জন্য ব্রাউজার খুলতেই বুঝল আগের রাতে ব্রডব্যান্ড এর প্যাক এক্সপায়ার করেছে।কিছুটা হতাশ হল সে। ঘরের লাইট টা অফ করে দিয়ে, খাটে শুয়ে ফেসবুক আর ইন্সটাগ্রাম চালাতে থাকে ইশান। অনেক ক্লান্ত ছিল , বেশ কিছুক্ষনের মধ্যেই নিজের অজান্তে ঘুম এসে যাই তার। [রাত ১ টা ৪৫] ইশান? ইশান? ওঠো ইশান ! তারাতারি ! ফিসফিসে গলায় ইশানের কানের কাছে মাথা নিয়ে কে যেন ডাকছে। সে তখন অর্ধ নিদ্রায়, আবার সেই ডাক! তাড়াতাড়ি ওঠো ! কে ডাকছে! সে তো রুম এ একা, পাশের রুমের দুজন ও বাড়ি গিয়েছে। চোখ খুলল এবার সে, অন্ধকারের ভিতর দুটো চোখ তার মুখের উপর ঝুকে রয়েছে। চুল গুলো তার মতো, কি আশ্চর্য! আবছা ভাবে দেখা যাচ্ছে মুখ টাও তার প্রায় এক। কিন্তু মুখের রং কেমন যেন। ইশানের সারা শরীরে হিম শীতল স্রোত খেলে গেল। তার শরীর আড়ষ্ট হয়ে গিয়েছে! এক দৃষ্টিতে সেই চোখ দুটোর দিকে তাকিয়ে রয়েছে। সারা ঘরে নিস্তব্ধতা, ঘামছে ইশান।তার ইচ্ছা করছে বিছানা থেকে এক লাফ দিয়ে উঠে পালাবে, কিন্তু পারছেনা। কোণো এক অজানা শক্তি তাকে জাপ্টে ধরে আছে। স্লিপ্প প্যারালাইসিস? নিজেকে জিজ্ঞাসা করল ইশান। তার কলেজের বন্ধুদের কাছ থেকে সে স্লিপ প্যারালাইসিস এর ভয়ংকর সব গল্প শুনেছে । সেই দুঃস্বপ্ন কী তার সাথেও হচ্ছে? এবার আরও বেশি ভয় পেয়ে গেল সে। ‘ভয় পেয়োনা, আমি তোমার কোনো শত্রূ নয় বা তোমার কোনো ক্ষতিও করতে আসিনি, আমি তোমার কাছে কিছু সাহায্য চাইতে এসেছি।‘’ আবার মৃদু গলায় সেই মুর্তি টি বলল। “আর তোমাকে এরকম ভাবে ভয় পাওয়ানোর জন্য দুঃক্ষিত, এছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না আমার কাছে।“ অন্ধকারের ভিতর সেই মুর্তি টা এবার কিছু টা পিছিয়ে বলল “এবার তুমি উঠে বসতে পার। হঠাত করে ইশানের দেহের সেই বাধন টা খুলে গেল। সে চাইলে এবার পালাতে পারত, কিন্তু সে সত্যি ই উঠে বসল কারন এটা তো কোনো চোর ডাকাত নয়। একটা চোর ডাকাতের ক্ষেত্রে তার সারা দেহ প্যারালাইস করে রাখা সম্ভব নয়। “কে তুমি?” টেবিলের পাশে রাখা জলের বতল টা হাতে নিয়ে প্রশ্ন করল ইশান। “বলব, সব ই বলব, তার আগে তুমি একটু স্বাভাবিক হয়ে নাও।ইশান এবার উঠে ঘরের লাইট টা জ্বালাল। তার চোখ কপালে উঠে গেল, এতো পুরোপুরি সে নিজেই। তার মতো দেখতে একটা ছেলে পাশের বেড এ বসে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। এর থেকে ভয়ানক অনুভুতি সে তার জীবনে কখনও অনুভব করেনি। ছেলেটা ইশানের মতো দেখতে হলেও তার হাত পা দেখে মনে হচ্ছিল সে রক্ত মাংশের মানুষ না, অন্য কিছু দিয়ে তৈরি। আয়নার ভিতরকার সে যেন জীবন্ত হয়ে বাইরে বেরিয়েছে। “ আমার নাম রেলিক।“ নিস্তব্ধতা ভেদ করে ইশানের মতো দেখতে ঐ ছেলেটি বলল। তুমি জানতে চাও আমাকে তোমার মতো দেখতে কেন?, জানতে চাও আমি তোমার কাছে কেন এলাম?” আমি পৃথীবির কেউ না... কথা শেষ হওয়ার আগেই ইশান বলল এলিয়েন? তুমি এলিয়েন? উত্তরে রেলিক বলল না।এতে ইশানের উতসাহ যেন হারিয়ে গেল। “ আমি হলাম নেগেটিভ ইশান।“ বলল রেলিক। মানেহ? নাক শিটকালো ইশান। “মানে টা পরিষ্কার ভাবে বলতে গেলে তুমি আর আমি মিলে শুন্য।“ রেলিক কি বলছে ইশান তার কিছু বুঝছেনা, আর সে তার নাম ই বা কোথা থেকে জানল? “আমি যেখান থেকে এসেছি সেটাকে তুমি তোমার ভাষায় নেগেটিভ ইঊনিভার্স বলতে পারো। আমি একজন আসামি। অন্তত আমার ইউনিভার্সের লোকের কাছে তো তাই ই।“ “নেগেটিভ ইউনিভার্স ! “ ইশান বিড়বিড় করে বলল। “আচ্ছা ইশান, তুমি যে লাইট টা অন করলে, সেটা কেনো জ্বলল বলতে পার?” ইশানের মুখের দিকে তাকিয়ে রেলিকের প্রশ্ন। “ কারেন্ট এর জন্য! ইলেক্ট্রিক্যাল এনার্জির জন্য! এতে আবার এমন কী?” বলল ইশান। চোখ বড় বড় হয়ে গেল রেলিক এর। কিছুটা উত্তেজিত হয়ে বলল”হ্যা! এনার্জি!” “লাইট, ফ্যান, টিভি, তোমার প্রিয় মোবাইল সব ই তো চলছে এনার্জির জন্য। কি করবে তুমি যদি সব এনার্জি শেষ হয়ে যায়? কি করে দেখবে তুমি ইঊটিঊব?” ইশান পদার্থবিদ্যার ছাত্র। একদিন সব শক্তি শেষ হয়ে যাবে, এটা তার কাছে নতুন কিছু না। সব ব্যাবহারযোগ্য শক্তি একসময় এনট্রপি তে পরিনত হবে। মহা বিশ্বের এন্ট্রপি হবে ম্যাক্সিমাম। কিন্তু সেসব ঘটবে বিলিয়ন বিলিয়ন বছর পর, তা নিয়ে এখন চিন্তা কীসের?, আর এটাই তো প্রকৃতির নিয়ম” প্রশ্ন করল ইশান। “ইয়েস! এটাই প্রকৃতির নিয়ম, আর এটাই হল তোমাদের মতো মানুষ জাতির সীমাব্ধতা, হাঃ হাঃ হাঃ! “কেমন যেন বিচ্ছিরি চাপা হাসির শব্দ করল রেলিক। কী বলতে চাচ্ছ তুমি, প্রশ্ন করল ইশান। “আমরা তোমাদের থেকে অনেক অ্যাডভ্যান্স, সেটা যে কোনো দিক দিয়ে। তুমি যে বিলিয়ন বিলিয়ন বছর পরের কথা বললে, আমাদের ইউনিভার্স এ সেই সময় এখন। প্রযুক্তি যেমন একটা জাতী কে সভ্যতার শিখরে নিয়ে যায়, তেমন এক নিমেষে তা ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে। আমাদের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। আমাদের সব এনার্জী শেষের দিকে। কিন্তু আমার ইউনিভার্সের প্রানীরা তোমাদের মতো সীমাবদ্ধ নয়। তারা জানে কীভাবে প্রতিকূলতার মোকাবিলা করতে হয়।অ্যান্টিম্যাটার বা প্রতি পদার্থের নাম শুনেছ ইশান? প্রশ্ন করল রেলিক। “হ্যা শুনেছি!”,বিদ্যুতবেগে উত্তর ইশানের। একটা ইলেক্ট্রনের ভর এক রেখে তার ঋনাত্মক আধান কে ধনাত্মক করলে তৈরি হয় ইলেক্ট্রনের অ্যান্টিম্যাটার পজিট্রন। এক ই ভাবে প্রোটনের হয় অ্যান্টি প্রোটন। এসব ইশান ইঊটিঊব দেখে জেনেছে। মাঝে মাঝে বন্ধুদের সাথে আলোচনাও হয় এগুলো নিয়ে। সম্প্রতি এল এইচ কোলাইডার এ এসব পার্টিক্যাল তৈরি হচ্ছে। রেলিক আবার বলা শুরু করল “ তুমি জানো এই পার্টিক্যাল আর অ্যান্টি পার্টিক্যাল কে যদি এক সাথে মিশিয়ে দেওয়া যায় তাহলে দুজনেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে, তৈরি হবে বিপুল পরিমান শক্তি। তোমাদের আইন্সটাইন এর E=mc2 সুত্রানুযায়ী ১ কেজি পদার্থ আর ১ কেজি প্রতি পদার্থ মেশালে যে শক্তি উতপন্ন হবে তা ১০^১১ কেজি গ্রানাইট পাথর গলিয়ে দিতে পারে। আমি ই তোমার অ্যান্টিম্যাটার। আমাদের ইউনিভার্স ই তোমাদের অ্যান্টি ইঊনিভার্স। এবার ভেবে দেখ ইশান আমি তুমি যদি মিশে যাই এই সমগ্র পৃথিবী, সমগ্র মহাবিশ্ব যদি মিশে যাই কি বিপুল শক্তি উতপন্ন হবে তা ভাবতে পারছ? তা কল্পনার ও অতীত। “তুমি কি ভাব? নাথিং থেকে বিগ ব্যাং হয়ে এমনি এমনি তোমাদের ইউনিভার্স তৈরি হয়ে গেল? ০=+১ – ১, তোমাদের মহাবিশ্ব যদি +১ হয় -১ কোথায় গেল? ভেবেছ কোনোদিন এসব? চেষ্টা করেছ কোনোদিন সমীকরন মেলানোর? শুধু ব্যাগ ঘাড়ে করে কলেজ গিয়েছ। যাই হোক,” আমাদের এই শক্তি সমস্যার সমাধানের জন্য বিভিন্ন জাইগার নামি দামি কিছু স্ক্লার দের নিয়ে একটা টিম বানানো হয়, রেলিক কথা শেষ করতে পারেনা, “beneath the sky its black as diamond, we running out of time” অ্যালেন ওয়াকার এর ডার্কসাইড রিং টোন বেজে ওঠে ইশানের ফোনে। প্রবীর ফোন করেছে, ফোনের ওপাশ থেকে বলল” হ্যা ভাই? প্রোগ্রামিং এর অ্যাসাইনমেন্ট জমা করেছিস? না হলে কাল ল্যাব এ ঢুকতে দেবে না।ইশান উত্তরে বলল, না রে আগের সপ্তাহে খুব জ্বর ছিল আমার,। করিনি।“ প্রবীর কে গুড নাইট জানিয়ে ফোন রাখল ইশান। রেলিক আবার বলা শুরু করল “ তো যে টিম টা বানানো হয়, আমিও তার একজন সদস্য। আমি এমন এক পদ্ধতি আবিষ্কার করি যার সাহায্যে ক্ষয় ক্ষতি ছাড়া, সহজে ম্যাটার অ্যান্টিম্যাটার সঙ্ঘর্ষের মাধ্যমে উতপণ্ণ শক্তি কাজে লাগানো যায়। কিন্তু আমার টিম এই পদ্ধতির মাধ্যমে তোমাদের আর আমাদের ইউনিভার্স মিলিয়ে দিতে চাই একটু একটু করে সার্থসিধ্বির জন্য। এতে ধ্বংস হবে বিলিওন বিলিওন গ্রহ নখত্র, প্রান। আমি আমার আবিষ্কারের এত বড় মিস ইউজ হতে দিতে পারিনা। আমি তাদের বিরোধীতা করায়, আমাকে টিম থেকে বহিষ্কার করা হয় ও রাষ্ট্রদ্রোহীতার অপরাধে আসামী সাব্যস্ত করা হয়। তারা আমার তৈরি যন্ত্র দিয়ে ছোটোখাটো পরীক্ষাও করেছে, আমি কোনো মতে সেটা নিষ্ক্রিয় করি। আজ স্টেশনের বাজ পড়ার কথা মনে পড়ছে? ওটা কোণো বাজ নয়। ওটা তাদের টেস্টিং এর ফল। নেহাত আমি প্রক্রীয়া কে নিষ্ক্রিয় করি, তাই তার এত কম ইম্প্যাক্ট পড়েছে। আর যেখানে গামা রশ্মি বেরোনোর কথা সেখানে বেরিয়েছে দৃশ্যমান আলোক রশ্মি। আর তুমি এখনো অক্ষত অবস্তায় আমার সামনে । একথা শুনে ইশানের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল। সিগন্যাল পোস্টের মতো এই পুর পৃথিবী অদৃশ্য হয়ে যাবে? তার বন্ধুরা, তার পরিবার, তার কলেজ সব? না এটা হতে পারে না। ইশান প্রশ্ন করল “ আচ্ছা তুমি যদি আমার অ্যান্টিম্যাআটার হও, আমরা ধ্বংস হয়ে কেন যাচ্ছি না?” “ আসলে তুমি যে আমাকে দেখছ এটা আমি না, এটা আমার প্রোজেকশণ বা ছায়া মাত্র। “কী ভাবে আটকাবে তাদের?” প্রশ্ন ইশানের। “কি ভাবে আটকাবো সে প্ল্যান নিয়েই আমি এখানে এসছি। তারা যেভাবে সমগ্র মহাবিশ্ব কে ধ্বংস করতে চায়, ঠিক এক ই ভাবে আমি ঐ যন্ত্র আর আমার সমস্ত রিসার্চ ডেটা ধ্বংস করব। ইশানের বুঝতে দেরি হল না রেলিক কিভাবে ধ্বংস করার কথা বলছে। “ কোথায় পাব তোমার যন্ত্রের আর রিসার্চ ডেটার অ্যান্টিপার্টিক্যাল” ইশান বলল। “তোমার ফিজিক্স ল্যাব এ! “ রেলিকের উত্তর। “হোয়াট? আর ইউ সিরিয়াস? মজা করছ?” ইশান গর্জে উঠল। “না মজা করছিনা, একপ্রকার বলতে গেলে আমার ইউনিভার্স এ ওটাই আমার ল্যাব। রেলিক ইশান কে সব বুঝিয়ে বলে দিল তাকে ল্যাব থেকে কি কি ইন্সট্রুমেন্ট চুরি করে আনতে হবে। এখন সকাল ৬ টা। ইশানের ক্লাস ১০ টা ৪৫ থেকে শুরু হলেও মরনিং সেকশনের ক্লাস ৭ টা থেকে শুরু হয়ে যাবে। তাই সে তাড়াতাড়ি ব্যাগ টা কাধে নিয়ে দৌড়াল। স্টেশনে যাওয়ার সাথে সাথে ট্রেন পেয়ে যাওয়ায় কলেজ পৌছাতে তার দেরি হলনা, ডিপার্ট্মেন্টের ল্যাব এ ঢুকে রেলিক তাকে যে যে যন্ত্র নিতে বলেছে তা ফটাফট ব্যাগ এ ঢোকাই ইশান। সেই চোরাই লিস্ট এ আছে কালকের সবার সাবমিট করা অ্যাসাইনমেণ্টের বান্ডেলও। ইশান কাজ শেষ করে বাইরে বেরোবে এমন সময়, তার মর্নিং সেকশনের এক বন্ধুর সাথে দেখা। ‘কি রে? এত সকালে কলেজে কী?’ প্রশ্ন তার বন্ধুর’ । এখানে ইশানের মিথ্যা বলার প্রতিভা কাজে লেগে গেল, সে ফ্রাকশন অফ সেকেণ্ডের মধ্যে বলল,’ আরে কাল বই ফেলে গিয়েছিলাম,নিতে এসছি।‘ সব কাজ সেরে এবার রুমে ঢুকল ইশান। রেলিক খাটের উপর বসে। তুমি কি তখন থেকে এখানেই বসে আছ? ইশানের প্রশ্ন শুনে রেলিক একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল,’ আমার প্রোজেকশন যন্ত্র টা এখনও ইমপারফেক্ট। তোমার নির্দিষ্ট রেঞ্জের মধ্যেই নিজেকে প্রোজেক্ট করতে পারব, তুমি দূরে গেলে পারবনা। না হলে তোমাকে অত রাতে ভয় দেখানোর কি প্রয়োজন ছিল? আমি তো এগুলো নিজেও আনতে পারতাম! রেলিক ইশানের কাছ থেকে চোরাই মাল গুলো নিয়ে বলল,” এগুলো কে নিয়ে যাওয়া হবে বিশেষ আবরনের মধ্যে, যাতে কাজ না হওয়া পর্যন্ত কোনো কিছুর সাথে ইন্ট্যারাক্ট না করতে পারে। অনেক ধন্যবাদ ইশান। আমি কথা দিচ্ছি তোমার ইউনিভার্সের একটি সিগণ্যাল পোস্ট ও আর অদৃশ্য হবেনা। জীবিত থাকলে আবার দেখা হবে তোমার সাথে।“ ইশান কিছু বলার আগেই রেলিক অদৃশ্য হয়ে গেল। সে খাটের উপর ধপ করে বসে পড়ল, এতক্ষন তার সাথে কি কি হল সেটা ভাবতে লাগল। অনেক সময় আছে, আজ প্রথম ক্লাসটা করতে পারবে সে। ইশান খেয়ে সময় মতো কলেজ পৌছায়। প্রোগ্রামিং এর ল্যাব , সবার সাথে ইশান ও ল্যাব এর ভিতরে। “অ্যাসাইন্মেন্ট জমা করেছ?” শিক্ষকের প্রশ্ন। “ হ্যা স্যার কাল করেছি।“ স্যারের বিশ্বাস হলনা।, অ্যাসাইন্মেন্ট এর বান্ডেল বের করার জন্য ড্রয়ার খুলে দেখে, বান্ডেল হাওয়া।